জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যভাণ্ডারে প্রবেশাধিকার নিয়ে কথা চলছে দীর্ঘদিন
ধরে। রাষ্ট্রীয় কয়েকটি সংস্থা এ জন্য আবেদনও করেছে। তবে প্রাথমিক অবস্থায়
ভোটাররা নিজেদের ব্যক্তিগত তথ্য-উপাত্ত নির্ধারিত নিয়মে যাতে অনলাইনে দেখতে
পান সে বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা কমিশন পর্যালোচনা করছে। এক্ষেত্রে গোপনীয়তা
বজায় রাখা সম্ভব হবে বলে মনে করছে সংস্থাটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, ভোটার নম্বর বলতে না পারায় এবং সংশ্লিষ্ট সহকারী
প্রিসাইডিং অফিসার ভোটার তালিকায় উপস্থিত ভোটার নম্বর খুঁজে বের করার কষ্ট
না করায় অনেক ভোটারকে জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে থাকা সত্ত্বেও ভোটদান ব্যতিরেকে
ফিরে যেতে হয়েছে। তিনি আরও বলেছেন, বর্তমানে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা,
স্কুল কলেজে ভর্তির দরখাস্ত করা, ট্রেড লাইসেন্স ও অন্যান্য লাইসেন্সের
জন্য দরখাস্ত করা ইত্যাদি নানাবিধ কাজে জাতীয় পরিচিতি নম্বর ও কোনো কোনো
ক্ষেত্রে ভোটার নম্বর উল্লেখ করতে হয়। এ অবস্থায় জনগণের সুবিধার্থে
ব্যক্তির নাম, পিতা বা স্বামীর নাম, মায়ের নাম, স্থায়ী বা অস্থায়ী ঠিকানা,
জাতীয় পরিচিতি নম্বর ও ভোটার নম্বর শুধু পাঠযোগ্য করে ওয়েবসাইটে প্রকাশ
করার বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে।
বৃহস্পতিবার কমিশন সভায় ওই প্রস্তাব নাকচ হয়ে যায়। তবে ওই প্রস্তাবের
পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় পরিচয় অনুবিভাগ নতুন একটি প্রস্তাবনা তৈরি করে। এতে
সংশ্লিষ্ট ভোটার রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে নিজস্ব পাসওয়ার্ড ও ইউজার নামের
মাধ্যমে তথ্য দেখতে পারবে। এক্ষেত্রে গোপনীয়তা বজায় রাখা সম্ভব হবে বলে মনে
করছে সংস্থাটি। এর আগে একই প্রক্রিয়ায় জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য যাচাইয়ের
জন্য তথ্যভাণ্ডারে প্রবেশাধিকার চেয়ে আবেদন করে র্যাপিড অ্যাকশন
ব্যাটালিয়ন (র্যাব), পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি), সামরিক প্রতিরক্ষা
গোয়েন্দা সংস্থা (ডিজিএফআই), বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুরেলটরি কমিশন
(বিটিআরসি), পরিসংখ্যান ব্যুরো, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু
ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্প, সমাজসেবা অধিদফতর এবং ডিজিটাল স্বাক্ষর
প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ। ওই সব আবেদনও বিবেচনায় রেখে প্রবেশাধিকার দেয়ার
প্রক্রিয়া শুরু করেছে ইসি।
এদিকে ইসির তথ্যভাণ্ডার থেকে আরও তিন ধরনের তথ্য পাচ্ছে বাংলাদেশ
ব্যাংক। বৃহস্পতিবার কমিশন সভায় নতুন তথ্য দেয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
ফলে আগের ৬ ধরনের তথ্যের পাশাপাশি এখন থেকে ভোটারদের স্বামী বা পিতার নাম ও
ঠিকানা যাচাইয়ের সুযোগ পাবে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১২ সাল থেকে ৬ ধরনের তথ্য
সরাসরি অনলাইনের মাধ্যমে পাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতদিন ভোটারের নাম, পিতার
নাম অথবা স্বামীর নাম, মাতার নাম, জন্ম তারিখ, রক্তের গ্রুপ ও ছবি দেখতে
পেত। এর সঙ্গে নতুন তথ্য পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হল।
চাকরির দরখাস্ত, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলাসহ বিভিন্ন কাজে জনগণের
সুবিধার্থে নাগরিকদের ছয় ধরনের তথ্য ওয়েবসাইটে প্রকাশের বিষয়ে একটি
প্রস্তাবনা ইসির বৈঠকে উত্থাপন করা হয়। এতে নাগরিকদের নাম, পিতা বা স্বামীর
নাম, মাতার নাম, স্থায়ী বা অস্থায়ী ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর এবং
ভোটার নম্বর শুধু পাঠযোগ্য করে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার বিষয়ে প্রস্তাব করা
হয়। নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারকের একটি প্রস্তাবনার
পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি বৈঠকের এজেন্ডাভুক্ত করা হয়।
বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে বলা হয়, ভোটারদের পরিচিতি নম্বর, ভোটার নম্বরসহ
অন্যান্য তথ্য-উপাত্ত ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হলে গোপনীয়তা লংঘন হতে পারে।
অপরাধীরা এ সুযোগকে কাজে লাগাতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। বৈঠকে আরও
বলা হয়, তথ্য প্রকাশের ফলে ভোটাররা ঝুঁকিতে পড়তে পারেন। এছাড়াও এনআইডি
আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিকও। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (সংশোধন) আইন, ২০১৩-এর ধারা
১৩(২) অনুযায়ী কমিশনে সংরক্ষিত তথ্য-উপাত্ত গোপনীয় বলে বিবেচিত।
বৈঠকে এ বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনার পর নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক
প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেন বলে জানা গেছে। তবে ব্যক্তিগতভাবে যাতে
ভোটাররা নিজেদের তথ্য দেখতে পারেন সে প্রস্তাবের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত
হয়নি। জানতে চাওয়া হলে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সুলতানুজ্জামান মো. সালেহ উদ্দিন বৃহস্পতিবার
যুগান্তরকে বলেন, অনলাইনে ভোটাররা যাতে শুধু নিজেদের তথ্য-উপাত্ত দেখতে
পারেন, এমনভাবে তথ্য-উপাত্ত প্রকাশের প্রস্তাব কমিশন সভায় উত্থাপন করা
হয়েছিল। কমিশন বিষয়টি আরও পর্যালোচনা করে পরের সভায় উত্থাপন করতে বলেছে।
তিনি বলেন, ভোটাররা রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে অনলাইনে নিজস্ব পাসওয়ার্ড
ব্যবহার করে শুধু নিজের তথ্য ওয়েবসাইটে দেখতে পারবেন। একজনের তথ্য আরেকজন
দেখতে পাবেন না। অনলাইনে ডাটাবেজ সংশোধনসহ নানা সুযোগ-সুবিধা পেতে পারবেন।
এতে নাগরিক ভোগান্তি কমে আসবে। সূত্র জানায়, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (সংশোধন)
আইন, ২০১৩-এর ধারা ১৩(২) অনুযায়ী কমিশনে সংরক্ষিত তথ্য-উপাত্ত গোপনীয় বলে
বিবেচিত। তবে জ্যেষ্ঠ নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক জনগণের
সুবিধার্থে ৬ ধরনের তথ্য-উপাত্ত ওয়েবসাইটে প্রকাশের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন
কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের কাছে একটি নোট দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে এ
উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। একই ধরনের নোট অন্য কমিশনারদের দিয়েছেন তিনি।
তথ্য-উপাত্ত ওয়েবাসইটে প্রকাশের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে তিনি বলেছেন, কোন
লোক তার জাতীয় পরিচয়পত্র হারিয়ে ফেললে তদস্থলে একটি পরিচয়পত্র পাওয়ার
নিমিত্ত থানায় ডায়েরি করে তার কপিসহ জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগে আবেদন
করত হয়। এহেন পরিস্থিতিতে যদি তার জাতীয় পরিচিতি নম্বর স্মরণে বা কোথাও
রেকর্ড করা না থাকে তখন সেই নম্বরবিহীন দরখাস্তের ভিত্তিতে থানায় ডায়েরি
লেখে না এবং জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগও দরখাস্ত গ্রহণ করে না।
[ Read More ]